মোঃ বিল্লাল হোসেনঃবাংলাদেশের বৃহত্তম পাইকারি বাজার গুলোর মধ্যে টঙ্গী বাজার সবচেয়ে প্রাচীন ও চতুর্মুখী বাজার। উত্তরা ও টঙ্গী, গাজীপুর বাসীর একমাত্র পাইকারি ক্রয় বিক্রয়ের অন্যতম নির্ভরযোগ্য টঙ্গী বাজার। প্রতিদিন প্রায় হাজার হাজার লোকের সমাগম ঘটে এই বাজারে। ক্রেতা ও বিক্রেতা অতি সহজেই দৈনন্দিন অতি প্রয়োজনীয় পন্যের চাহিদা মেটাতে সক্ষম হয়।
উত্তরা ও টঙ্গী, গাজীপুর বাসীর যাতায়াত ব্যবস্থার একমাত্র মাধ্যম ছিল আব্দুল্লাহপুর- টঙ্গী আরসিসি দুটি সেতু।
বিআরটি’র প্রকল্পের কারণে সেতু দুটি ভেঙে ফেলা হয় এবং ঐ স্থানে দুটি অস্থায়ী বেইলি সেতু সংযোগ করা হয়। বেশ কয়েক মাস হলো একটি বেইলী ব্রিজ ভেঙ্গে যায়। ব্রিজ ভেঙ্গে যাওয়ার ফলে সেতু ব্যবহারকারীদের যাতায়াত বন্ধ হয়ে যায়।
যার ফলে সাধারণ ক্রেতা ও ব্যবসায়ীগণ উপরের ফ্লাইওভার ব্যবহার করতে বাধ্য হয়।
টঙ্গী বাজারের ব্যবসায়ী জানান, দিনে ও রাতে ফ্লাইওভারটি ব্যবহার সম্পূর্ণ অনিরাপদ ও কষ্টসাধ্য। বর্তমানে ক্রেতা, ব্যবসায়ীগণ এবং সাধারণ জনগণ ব্রিজের উপরে নামলে ছিনতাইকারী ও ঢাকার দ্বারা আহত ও নিহত হচ্ছে। যার ফলে সবার মধ্যে ভয় ও আতঙ্কের সৃষ্টি হয়েছে। তারা আরো বলেন :
এই ঘটনার প্রভাবের কারণে ব্যবসায়ীগনের উপর ক্রয়-বিক্রয়ের নেতিবাচক অভাব পড়ছে।
পন্য সামগ্রী ক্রয় করার জন্য রিক্সা বা ভ্যান আনতে চাইলে অনেক রাস্তা ঘুরে আসতে হয় এবং অতিরিক্ত ভাড়া দিতে হয়।
বগুড়া হার্ডওয়্যারে মালিক বলেন, ব্যবসায়িক সমৃদ্ধির অন্যতম প্রধান মাধ্যম হচ্ছে নিরাপদ ও সহজ যোগাযোগ ব্যবস্থা।কিন্তু টঙ্গী তুরাগ নদীর উপর স্হায়ী সেতু না থাকার কারণে যোগাযোগ ব্যবস্থার তীব্র ব্যাঘাত করছে।যার ফলে অনেক ব্যবসায়ী ব্যবসা চালিয়ে রাখতে হিমশিম খাচ্ছেন। কেননা বাজারের সিংহভাগ ব্যবসায়ীর ব্যাংক লোন রয়েছে। সঠিক সময়ে ব্যাংক লোন পরিশোধ না করলে তাদের জরিমানা গুনতে হচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলে একসময় টঙ্গী বাজার জনশূন্য হয়ে পরবে।
পথচারীরা বলেন, এভাবে প্রতি নিয়ত ঢাকা ময়মনসিংহ হাইওয়ে রোড বন্ধ করে মানববন্ধন চলতে থাকলে সাধারণ জনগণের দুর্ভোগ দিন দিন বৃদ্ধি পাবে। এতে করে সরকারের প্রতি সাধারণ জনগণের নেতিবাচক প্রভাব সৃষ্টি হবে।দেশের আর্থিক অবস্থায় নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।
☞ স্থায়ী সেতু না থাকায় ব্যবসায়ী, ক্রেতা- বিক্রেতা এবং জনগণ যে সকল সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন :-
১) মুমূর্ষ রোগীদের উন্নত চিকিৎসা সেবা নিতে উত্তরা ও ঢাকায় যাতায়াত করা খুবই কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছে।
২) গর্ভবতী ও বৃদ্ধ এবং অসুস্থ রোগীদের ফ্লাইওভারের উপর দিয়ে উঠানামা অনেক কষ্ট সাধ্য।
৩) টঙ্গী বাজার ইসলামী ব্যাংক হতে আব্দুল্লাহপুর পর্যন্ত রাস্তা সম্পূর্ণ ব্যবহার অনুপযোগী। যার ফলে কোন পরিবহন নিত্য প্রয়োজনীয় মালামাল নিয়ে আসা-যাওয়া করতে রাজি হয় না।
৪) ব্যবসায়ীদের মালামাল আনা নেওয়ার খরচ বেশি হচ্ছে যার প্রভাব সাধারণ ক্রেতাদের উপর পড়ছে।
৫) স্কুল কলেজ ও মাদ্রাসায় অধ্যায়নরত ছাত্র-ছাত্রীদের উত্তরা ও ঢাকায় যাতায়াতের সময় ও খরচ দুইটি বেশি হচ্ছে। সময় মত ক্লাসে ও পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে সমস্যা হচ্ছে।
৬) সাধারণ ও খুচরা ক্রেতার যাতায়াত ভাড়া পূর্বের চেয়ে অনেকগুন বৃদ্ধি পাচ্ছে।
৭) মুসলিম উম্মাহের সবচেয়ে বড় জামায়াত টঙ্গী বিশ্ব ইজতেমা। ইজতেমায় আগত প্রবীণ মুসল্লিদের ফ্লাইওভারের উপর দিয়ে যাতায়াত করা অনেক কষ্টসাধ্য।
৮) বেইলি ব্রিজ দুটি মেরামত না করার ফলে প্রতিদিন রিক্সা ও ভ্যান গাড়ির অতিরিক্ত চলাচলের ফলে দীর্ঘ সময় দীর্ঘ যানজট লেগেই থাকে।
৯) দুষ্কৃতিকারীরা প্রতিনিয়ত অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে সাধারণ জনগণের স্বর্ণালংকার, মোবাইল, টাকা সহ মহামূল্যবান জিনিসপত্র হাতিয়ে নিচ্ছে যার ফলে টঙ্গী বাজার ক্রেতাশুন্য হয়ে তার ঐতিহ্য হারাতে বসেছে।
উত্তরা ও টঙ্গী, গাজীপুরবাসীর প্রাণের দাবি টঙ্গী তুরাগ নদীর উপর স্থায়ী সেতু নির্মাণ করা হোক।