শিরোনাম :
কোম্পানীগঞ্জ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির ইফতার মাহফিল ও কাউন্সিল অধিবেশন-২০২৫ অনুষ্ঠিত নবীনগরের রতনপুর ও খাগাতুয়া গ্রামের বিলে পুকুর পাড়ের একটি গাছে সাথে যুবকে হাত বাঁধা ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার। কোম্পানীগঞ্জে ছাত্রদলের সভাপতি রাকিব ও সম্পাদক নাছিরকে শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়ে ছাত্রদলের আনন্দ মিছিল সাধুপাড়া রেজভীয়া দরবার শরীফে ইফতার ও মিলাদ মাহফিল অনুষ্ঠিত ইসলামবাগ মাদ্রাসায় হাফিজি বাচ্চাদের নিয়ে ইফতার মাহফিল অনুষ্ঠিত। নোয়াখালীতে ছাত্রদল নেতাকে হত্যার পরিকল্পনা ফাঁস, থানায় জিডি পাকুন্দিয়ায় জিয়া উদ্দিন বাদশার মা স্মৃতি পাঠাগারের উদ্যোগে এতিমদের আর্থিক সহযোগিতা প্রদান ও ইফতার মাহফিল অনুষ্ঠিত নবীনগর শাহবাজপুরে জামায়াতের আলোচনা সভা ও ইফতার মাহফিল অনুষ্ঠিত। আলমনগর দারুল উলুম ইসলামিয়া হাফিজিয়া মাদ্রাসার উদ্যোগে দোয়া ও ইফতার মাহফিল অনুষ্ঠিত ২০নং কাইতলা দক্ষিণ ইউনিয়ন বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের উদ্যোগে ইফতার পার্টি ও আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত
শুক্রবার, ২৮ মার্চ ২০২৫, ০২:১৭ পূর্বাহ্ন

ইসলাম ধর্মে রোজা ফরজ হওয়ার ইতিহাস।

প্রতিনিধির নাম / ৩৬ বার
আপডেট : রবিবার, ২ মার্চ, ২০২৫

ইসলাম ধর্মে রোজা ফরজ হওয়ার ইতিহাস।

রোজা ইসলামের গুরুত্বপূর্ণ ফরজ বিধান ও ইসলামের পঞ্চস্তম্ভের একটি। ইসলামের যতগুলো বিধান সাধারণত সব মুসলামানের ওপর করা হয়েছে তার অন্যতম হলো রমজান মাসের ৩০ দিনের রোজা। অন্যটি হলো নামাজ।
আল্লাহ তায়ালা সাধারণভাবে এই দুইটি বিধান ধনী-গরিব সব শ্রেণীর মানুষের জন্য ফরজ করেছেন। এর বাইরে হজ ও জাকাত সবার জন্য ফরজ নয়। নিধারিত সময় এবং নির্ধারিত উপকরণ পাওয়া গেলে তা ফরজ। অর্থাৎ, হজ ফরজ হয় জিলহজ মাসে কারো কাছে মক্কায় গিয়ে হজ করে আসা পরিমাণ সম্পদ থাকলে। আর জাকাত ফরজ হয় এক বছরের বেশি নেসাব পরিমাণ সম্পদ থাকলে। তবে রোজা সুস্থ মস্তিস্ক, প্রাপ্ত বয়স্ক নারী-পুরুষ সবার ওপর ফরজ।রোজা বিধান ইসলামের সূচনা থেকেই ফরজ করা হয়নি মুসলমানদের ওপর। প্রথম দিকে তা নফল হিসেবে পালন করা হতো। এরপর দ্বিতীয় হিজরিতে মুসলমানদের ওপর হজ ফরজ করা হয় কোরআনের একটি আয়াত নাজিলের মাধ্যমে। সূরা বাকারার ১৮৩ নম্বর আয়াতে রোজা ফরজের বিধান নাজিল করা হয়েছে।

“হে ঈমানদারগণ! তোমাদের উপর রোজা ফরয করা হয়েছে, যেরূপ ফরজ করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তী লোকদের উপর, যেন তোমরা পরহেযগারী অর্জন করতে পার।[সুরা বাকারা, আয়াত : ১৮৩]”

রোজার পূর্ব ইতিহাস বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় যে, হজরত আদম (আ.) সম্পর্কে বলা হয়েছে, তিনি জান্নাত থেকে পৃথিবীতে আগমন করার পরে প্রত্যেক মাসে তিনটি রোজা রাখতেন। এটা শুকরিয়া হিসেবেও হতে পারে। আবার তাওবা হিসেবেও হতে পারে। চাঁদের হিসেবে ১৩, ১৪ ও ১৫ তারিখে এই রোজা রাখতেন। কারণ, এই দিনগুলোতে চাঁদ পূর্ণতা পায়। বলা হয়, একবার তিনি পানিতে নিজের চেহারা দেখে বুঝতে পারেন যে জান্নাতের সৌন্দর্য ও লাবণ্য তিনি এখানে পাননি। তখন তিনি দুঃখিত হয়ে বলেন, হে আল্লাহ, জান্নাতের পোশাকও আমার থেকে ছিনিয়ে নেওয়া হয়েছে। আবার সৌন্দর্য ও লাবণ্যও দেওয়া হয়নি। তখন তাকে বলা হয়, তুমি মাসে তিনটি রোজা রাখো। তিনি এই রোজা রাখতে শুরু করেন, যার বদৌলতে আগের মতো জান্নাতি রূপ-লাবণ্য ও ঔজ্জ্বল্য ফিরে পান। অবশ্য আলোচ্য বক্তব্যের কোনও সূত্র খুঁজে পাওয়া যায় না।যেভাবেই হোক, হজরত আদম আলাইহিস সালাম থেকে রোজার ধারাবাহিকতা শুরু হয়। তার পরবর্তী যুগে হজরত নূহ (আ.) এই রোজা রাখতেন। হজরত ইবরাহিম (আ.) ও রোজা রাখতেন। এ ব্যাপারে হাদিসে নববিতেও গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশনা পাওয়া যায়। হজরত মুসা (আ.) যখন তুর পাহাড়ে আল্লাহ তাআলার সাথে কথোপকথনে গমন করেন, তখন তিনি ৪০ দিন রোজা রাখেন। হজরত দাউদ (আ.) কে আল্লাহ তাআলা দুনিয়ার রাজত্বও দিয়েছিলেন। আবার নবুয়তও দিয়েছিলেন। তিনি একদিন রোজা রাখতেন, একদিন ইফতার করতেন। বছরে ছয় মাস রোজা রাখতেন। হাদিসে নববিতে একে রোজা রাখার উত্তম পদ্ধতি বলা হয়েছে। হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রা.) বলেন, প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে বলেছেন : “আল্লাহর নিকট সবচেয়ে পছন্দনীয় রোজা হলো হজরত দাউদ আলাইহিস সালামের নিয়মে রোজা পালন করা। তিনি একদিন সওম পালন করতেন, আরেক দিন বিরত থাকতেন। [সহিহ বুখারি, হাদিস : ১১৩১]”

হজরত জাকারিয়া (আ.) ও ইয়াহইয়া (আ.) ও রোজা রেখেছেন। হজরত ঈসা (আ.) ও দুই মাসের রোজা রাখতেন। হিন্দু ব্রাহ্মণরাও ৪০টি রোজা রাখেন। অতএব, বোঝা গেলো প্রত্যেক ধর্মে Fasting (রোজা) ইবাদত রয়েছে। ইনসাইক্লোপিডিয়া অব ব্রিটানিকায় Fasting (রোজা) শিরোনামের অধীনে লেখা হয়েছে, ‘আমরা দুনিয়ার এমন কোনও ধর্ম পাইনি, যে ধর্মে রোজার ইবাদত নেই।’ হিজরত করে মদিনায় আসার কিছু দিন পর থেকেই মুসলিমরা আশুরার রোজা পালন করতে শুরু করেন। এই সময় আশুরার রোজাই তাদের ওপর ওয়াজিব ছিল। হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, প্রিয়নবী হযরত মোহাম্মদ (সা.) যখন মদিনায় আসেন তখন দেখতে পান, ইহুদিরা আশুরার দিন রোজা রাখে। তাদের রোজা রাখার কারণ জিজ্ঞাসা করলে তারা বললো, এই দিনেই আল্লাহ তাআলা মুসা ও বনি ইসরাইলকে ফিরাউনের ওপর বিজয় দিয়েছিলেন। তাই আমরা ওই দিনের সম্মানে রোজা পালন করি। হযরত মোহাম্মদ (সা.) বললেন, “তোমাদের চেয়ে আমরা মুসা আলাইহিস সালামের বেশি নিকটবর্তী। এরপর তিনি সবাইকে রোজা পালনের নির্দেশ দেন। [সহিহ বুখারি, হাদিস : ৩৯৪৩]”

হজরত আয়েশা (রা.) বলেন, “জাহেলি যুগে কুরাইশরা আশুরার রোজা পালন করতো এবং প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামও এই রোজা পালন করতেন। যখন তিনি মদিনায় আগমন করেন তখনও এই রোজা পালন করেন এবং তা পালনের নির্দেশ দেন। যখন রমজানের রোজা ফরজ করা হলো তখন আশুরার রোজা ছেড়ে দেওয়া হয়। যার ইচ্ছা সে পালন করবে আর যার ইচ্ছা পালন করবে না। [সহিহ বুখারি, হাদিস : ২০০২]”
বেশিরভাগ ফকিহ ও মুহাদ্দিসের মতে, রমজানের রোজা ফরজ হওয়ার আগে আশুরার রোজা ওয়াজিব ছিল, যা পরবর্তী সময়ে নফলে পরিণত হয়। আর প্রতি মাসে তিন দিন রোজা রাখার বিধান সবসময় মুস্তাহাব ছিল।
দ্বিতীয় হিজরিতে রমজানের রোজা ফরজ হয়। এই হিসাবে প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মোট ৯ বছর রমজানের রোজা পালন করেছেন। [আল-মাজমুআ: ৬/২৫০]

রমজানের রোজা যখন প্রথম ফরজ হয়, তখন রোজা রাখা ও ফিদিয়া দেওয়ার ইচ্ছাধিকার দেওয়া হয়। এই বিষয়ে পবিত্র কোরআন এর কথা হলো- “(তোমাদের ফরজ করা হয়েছে) রোজা নির্দিষ্ট কয়েক দিনের। তোমাদের মধ্যে কেউ পীড়িত হলে বা সফরে থাকলে অন্য সময় এই সংখ্যা পূরণ করে নিতে হবে। এটা যাদের মারাত্মক কষ্ট দেয় তাদের কর্তব্য হলো, এর পরিবর্তে ফিদিয়া, একজন অভাবগ্রস্তকে খাদ্য দান করা। যদি কেউ স্বতঃস্ফূর্তভাবে সৎকাজ করে তবে তা তার পক্ষে অধিক কল্যাণকর। অবশ্য রোজা পালন করাই তোমাদের জন্য অধিকতর কল্যাণকর, যদি তোমরা জানতে। [সুরা বাকারা, আয়াত: ১৮৪]”

এরপর কোনও প্রকার অবকাশ না রেখেই রোজা ফরজ করা হয়। “রমজান মাস। এতে মানুষের দিশারী এবং সৎপথের স্পষ্ট নিদর্শন ও সত্যাসত্যের পার্থক্যকারীরূপে কোরআন অবতীর্ণ হয়েছে। সুতরাং তোমাদের মধ্যে যারা এই মাস পাবে তারা যেন এই মাসে রোজা পালন করে। তোমাদের মধ্যে কেউ পীড়িত হলে বা সফরে থাকলে অন্য সময় এই সংখ্যা পূরণ করে নিতে হবে।[সুরা বাকারা, আয়াত : ১৮৫]” রমজানের রোজা যখন ফরজ হয়, তখন কেবল রাতের বেলা এশার নামাজ বা ঘুমের আগ পর্যন্ত পানাহার ও স্ত্রী-সহবাসের সুযোগ ছিল। এশার নামাজ বা ঘুমের পর পানাহার ও স্ত্রী-সহবাস নিষিদ্ধ হয়ে যেতো। পরবর্তীতে আল্লাহ তাআলা সময় সংক্ষিপ্ত করে সুবহে সাদিক থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত রোজার সময় নির্ধারণ করেন।
“রোজার রাতে তোমাদের জন্য স্ত্রী-সহবাস বৈধ করা হয়েছে। তারা তোমাদের পরিচ্ছদ এবং তোমরা তাদের পরিচ্ছদ। আল্লাহ জানেন যে তোমরা নিজেদের প্রতি অবিচার করছিলে। অতঃপর তিনি তোমাদের প্রতি ক্ষমাশীল হয়েছেন এবং তোমাদের অপরাধ ক্ষমা করেছেন। সুতরাং এখন তোমরা তাদের সঙ্গে সংগত হও এবং আল্লাহ যা তোমাদের জন্য বিধিবদ্ধ করেছেন তা কামনা করো। আর তোমরা পানাহার করো যতক্ষণ রাতের কৃষ্ণরেখা থেকে ঊষার শুভ্ররেখা স্পষ্টরূপে তোমাদের কাছে প্রতিভাত না হয়।[সুরা বাকারা, আয়াত : ১৮৭]”

এভাবেই ধারাবাহিকভাবে রোজা ফরজ হয়।

লেখকঃ মোশারফ হোসাইন উপজেলা নির্বাহী অফিসার সরাইল, ব্রাহ্মণবাড়িয়া।

Facebook Comments Box


এ জাতীয় আরো সংবাদ