রবিবার, ১৬ নভেম্বর ২০২৫, ১০:১৮ অপরাহ্ন

নবীনগরে বিলুপ্তিরপথে গ্রামবাংলার ঐতিহ্যবাহী নকশিকাঁথা

প্রতিনিধির নাম / ৩৬৬ বার
আপডেট : রবিবার, ২ নভেম্বর, ২০২৫
Oplus_131072

52

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগরে বিলুপ্তিরপথে গ্রামীণ ঐত্যিহের অবিচ্ছেদ্য অংশ নকশী কাঁথা। এক সময় এই নকশি কাঁথার প্রয়োজনীয়তা ও জনপ্রিয়তা ছিলো আকাশচুম্বি।ভারতবর্ষে নকশি কাঁথার প্রচলন শুরু হয় দুইশো বছর আগে।এই নকশি কাথার জন্য নবীনগর উপজেলার অনেক গ্রাম বিখ্যাত ছিলো।

নকশি কাঁথা শুধু কেবল সুঁই আর সুতোর কারুকাজ নয়, এ যেন চিরন্তন বাঙালি নারীদের ভালোবাসার গল্প। বাঙালী নারীরাই তাদের জীবনের চাওয়া না পাওয়ার গল্প,সংসার জীবনের গল্প সুচের ফোঁড়ে আর বাহারি রঙের সুতো দিয়ে নকশী কাঁথায় তুলে ধরতেন । গ্রামীণ নারীরা মনের মাধুরি মিশিয়ে তৈরি করেন এসব কাঁথা। যেখানে নতুন আর পুরনো কাপড়ে তৈরি এসব কাঁথায় সুচের ফোঁড়ে ভালোবাসা মিশে আছে।

তবে কালের বিবর্তনে নকশী কাঁথা এখন অনেকটা বিলীনের পথে। সময় ও পরিশ্রম বেশি হওয়ায় এবং মজুরি কম পাওয়ায় নকশী কাঁথা তৈনিতে গ্রামের নারীরা অনেকটাই বিমুখ হচ্ছেন। কোনো ধরনের প্রশিক্ষণ ছাড়াই নবীনগর উপজেলার আলমনগর, গৌপিনাথপুর, লাপাং শ্রীঘর,শ্যামগ্রাম,ইব্রাহিমপুর ও শ্রীরামপুর সহ ৫০টি গ্রামের নারীরা নকশী কাঁথা তৈরি করতে পটু।

এক সময় নকশি কাঁথা প্রায় ঘরে ঘরে তৈরি করা হতো।বর্ষাকালে গ্রামে খাওয়ার পর ক্লান্ত দুপুরে ঘরের সব কাজ সেরে নারীরা ঘরের মেঝে, বারান্দা বা গাছের ছায়ায় মাদুর পেতে বসত নকশী কাঁথা নিয়ে।

নকশী কাঁথা সাধারণত দুই পাটের অথবা তিন পাটের হয়ে থাকে। চার-পাঁচ পাটের কাঁথা শীত নিবারণের জন্য ব্যবহৃত হয়। তাতে কোনো কারুকার্য থাকে না। কিন্তু নকশী কাঁথায় বিভিন্ন নকশা থাকে। যেখানে লাল, নীল, সবুজ, বেগুনি, হলুদ প্রভৃতি রঙের সুতো দিয়ে সুচের ফোঁড়ে নকশা করা হয়ে থাকে। অঞ্চলভেদে যেমন নকশী কাঁথা, বাঁশপাতা ফোঁড়, বরকা ফোঁড়, কইতা, তেজবি ফোঁড় ও বিছা ফোঁড় ইত্যাদি নামে পরিচিত। তবে নবীনগরেও নকশী কাঁথা হিসেবেই পরিচিত।

আলমনগরের গ্রামের মুক্তিরানী বলেন, পুরনো অথবা নতুন কাপড় দিয়ে মূলত নকশী কাঁথা তৈরি করা হয়। প্রথমে কাপড়ের ওপর বিভিন্ন নকশার ছক আঁকাতে হয়। আর এ ছকের ওপর বিভিন্ন রঙের সুতা দিয়ে নকশা ফুটিয়ে সুজনি ফোঁড়, কাঁথা ফোড় ও বকুল ঝাড় কাঁথা তৈরি করা হয়।

নকশী কাঁথা তৈরিতে যে পরিমাণ পরিশ্রম হয় সে তুলনায় এখন মজুরি পাই না। ৪ বাই ৫ ফুট আকারের কাঁথা ১ হাজার ৫০০ টাকা, সাড়ে তিন বাই ৫ ফুট আকারের কাঁথায় ৮০০ থেকে ৯০০ টাকা মজুরি পাওয়া যায়। তবে যে মজুরি পাওয়া যায় তা যথেষ্ট না।

গ্রামের নারীরা যারা এসব শিল্পের সঙ্গে জড়িত তাদের সহজ শর্তে ঋণের ব্যবস্থা করা হলে পুনরায় এ শিল্পকর্মকে ফিরিয়ে আনা সম্ভব। সেই সঙ্গে হাতেকলমে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা প্রয়োজন।

নবীনগরে সমাজসেবা অফিস,সমবায় অফিস ও সমাজকল্যান অফিসের মাধ্যমে সরকারের বিভিন্ন সভা সেমিনার লোকদেখানো ভাবে পালন করলেও এই নকশিকাঁথার শিল্পীদের বিষয়ে কোন নজর ধারী নেই।

Facebook Comments Box


এ জাতীয় আরো সংবাদ