বাংলাদেশের টাকায় যেন লিখে মনের ভাব প্রকাশের একমাত্র খাতা!
লেখকঃ আমজাদ হোসেন সিনিয়র প্রিন্সিপাল অফিসার কুমিল্লা কর্পোরেট শাখা সোনালী ব্যাংক,প্রাক্তন প্রভাষক অধ্যাপক আবদুল মজিদ কলেজঃ
বাঙালির অন্যতম মজার একটি কালচার হচ্ছে টাকার উপর লেখালেখি করা। বিশ্বের অন্য কোন দেশে এই অবাক করা স্বভাব আছে কিনা আমার জানা নেই।
কাগুজে মুদ্রার নোটে ব্যবহৃত ছবির গালে দাড়ি, ঠোঁটে সিগারেট, মাথায় ক্যাপ এই ছবিগুলো ডালভাতের মতো হয়ে গেছে। মাঝে মাঝে কিছু নোটে মোবাইল নাম্বার পাওয়া যায়। ১০ টাকার একটা নোটে একদিন লেখা পেলাম- ” আমি সাইফুল, বাড়ি মাদারীপুর, ফ্রী টাইম কাটাতে কল করুন এই নাম্বারে, 01757……. ” বুঝলাম ব্যাটা ৫০০ টাকার নোটে না লিখে ১০ টাকার নোটের উপর কেন লিখেছে। ওর আসলেই অনেক ফ্রী টাইম!!
আরেক মজার ঘটনা, একদিন একটা ১০০ টাকার নোটের উপর লিখা- “এটা কিন্তু আসলে ২০০ টাকার নোট”। সাময়িকভাবে তাকে পাগল ভেবে পাত্তা না দিলে সমস্যা নাই, কিন্তু একটু গভীরভাবে ভাবলে বিজ্ঞানীটা ভুল বলেনি। সামনে ১০০, পেছনে ১০০ মিলিয়ে হয়তো এটা ২০০ টাকার নোট (চিন্তার বিষয়)।
বিশ্বের সবচেয়ে সুন্দর নোটের স্বীকৃতি পেয়েছিল আমাদের দুই টাকার নোট, অথচ একদিন দেখি এখানে দোয়েল পাখির ডানায় বসে গভীর চিন্তায় মগ্ন এক ব্যাটম্যানের ছবি।
একদিন এক মহিলা তার জমানো টাকা দিতে এসেছে কাউন্টারে, চেক করার সময় দেখি প্রতিটা ১০০০ টাকার নোটের পেছনে তার কাঁচা হাতের বড় বড় করে কলম দিয়ে লেখা – ২৩০০০, পরেরটা ২৪০০০, পরেরটাতে ২৫০০০…… তার জমানো ৩ লাখ টাকার প্রতিটা নোটে সে সামেশন করে রেখেছে।
এছাড়াও নোটে লিখেন স্বয়ং ক্যাশিয়াররাও। ডিনোমিনেশন করার জন্য কেউ পেন্সিলে, কেউ আবার কলমেও সংখ্যা লিখে রাখেন।
এছাড়া ” আই লাভ ইউ ববি”, “সাইফুল+পলি”, “বন্ধু হতে চাই” এসব লাইন তো সবার মুখস্ত।
এভাবে আর কতদিন!
সামনে বাজারে আসছে নতুন নোট। আপনি আমি চাইলেই কিন্তু এটা বন্ধ করতে পারি। নোটে যে কোন লেখা থাকলে সেটা আমরা নেবো না। এখন আর এই অজুহাত নেই যে ‘আগে থেকেই লেখা ছিল’ এটা বলার কারণ বাজারে সবই হবে নতুন নোট।
আমি না নিলে সে নেবে না, সে না নিলে তাকে যে দেবে সেও নেবে না। এই চেইন রিয়্যাকশনটা এভাবেই বন্ধ করা সম্ভব।
তবে এটুকুই যথেষ্ট নয়, এর জন্য দরকার আইন। এই বিষয়ক আইন এবং এর কঠোর বাস্তবায়নই পারে এই ভুল কালচার থেকে আমাদের বের করে আনতে। এই আইনটা এখনই করতে হবে, লেখা নোটগুলি অবাঞ্ছিত ঘোষণা করার এখনই উপযুক্ত সময়। কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।
আর এই আর্টিস্টদের বলছি- ভাই অনেক হয়েছে, এবার থামেন। এমন বাংলাদেশ রিপ্রেজেন্ট করে কী লাভটা হয় আপনার? নোটের ব্যক্তিটার চশমায় দুটো জিরো না এঁকে, ব্যাংকের চেকের পাতায় এককের ঘরের ডানে দুটো জিরো কীভাবে আঁকতে পারবেন সেটা ভাবেন!