ম্যাগনেটিক পিলারের বজ্রপাত নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতার রহস্য উদঘাটন!
মোঃখলিলুর রহমান খলিলঃ বাংলাদেশের জনগণের নিকট ব্রিটিশ আমলে ভূমি জরিপে বসানো মাটির নিচের ম্যাগনেটিক পিলারের বজ্রপাত নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা রয়েছে এমন ভ্রান্ত ধারণা দুই শত বছরের। মূলত প্রতিটি পিলারের ভেতরে সেলিয়াম নামক এক ধরনের ধাতব রয়েছে। ব্রিটিশরা এদেশে ম্যাগনেটিক পিলার বসিয়েছিল ভূমি জরিপের জন্য। এই ম্যাগনেটিক পিলারের ধ্বংসের ফলে বা চুরি হওয়ার ফলে বজ্রপাতে মৃত্যুর সংখ্যা বেড়েছে বলে এদেশে জনশ্রুতি রয়েছে। প্রতিবছর গড়ে ৩০০ মানুষ প্রাণ হারায় বজ্রপাতে। বাংলাদেশে মূলত মে মাস থেকে জুন দুমাস বজ্রপাতের সংখ্যা বেশি হয়। চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে এপ্রিল মাস পর্যন্ত ৬৭ জন প্রাণ হারায় বজ্রপাতে। ম্যাগনেটিক পিলারের কি অলৌকিক ক্ষমতা রয়েছে এর কোন সত্যতা পাওয়া যায়নি। পিলারগুলো বসানো হয়েছিল বৃটিশ আমলে এটাই সত্য। ১৭৫৭ সালের কয়েক বছর পর ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি প্রথমবারের মতো ভূমি জরিপের উদ্যোগ নেন।এই জরিপ ৭০ থেকে ৮০ বছর যাবৎ চলে আর এই জরিপের নাম দেয়া হয়েছিল থাকবাস্ট জরিপ।তিন মোজা এই জরিপের যে বিন্দুতে এসে মিলিত হই সেখানে একটি করে পিলার বসানো হয়েছিল। এই পিলারে চুম্বক থাকার কথাও শোনা যায় বর্ষায় ও বন্যায় পিলার ডুবে গেলে যেন অন্য কোন ধাতু দিয়ে পিলার চিহ্নিত করা যায় এটাই ছিল মূল উদ্দেশ্য। জরিপের পর আরও দুটি জরিপ করেছিল ব্রিটিশ সরকার এর একটি ছিল রেভিনিউ অন্যটি ছিল কেট আপ শপ। সার্ভে জরিপের সময় মাটির ডিবি বসানো হতো সে কারণে এই জরিপ ডিবি জরিপ নামে অপরিচিত। তবে সীমানা চিহ্নিত পিলার বা মাটির ডিবিতে অলৌকিক কিছু ছিল এই বিষয়ে কোন তথ্য প্রমাণ নেই। প্রমাণের জন্য পরমাণু শক্তি কমিশনে এক্সরে ফরেন পরীক্ষা করে দেখা যায় ব্রিটিশদের পিলারের ভিতরে মূলত ক্যালসিয়াম, আইরন, সিলিকন ও টাইটানিয়াম রয়েছে যা বজ্রপাত নিয়ন্ত্রণে কোন কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে না। তবে কোন কোনটার ভিতরে আবার লোহার রডও পাওয়া যায়। কিন্তু এখানে ইরিডিয়াম মূলত নিয়ন্ত্রণের সহযোগিতা করে। কিন্তু এদেশের মানুষের ধারণা এই ম্যাগনেটিক পিলারগুলো বজ্রপাত প্রতিরোধ করত। মূলত বজ্রপাত প্রতিরোধে যুক্তরাষ্ট্রের পিনসেলবিয়ায় ১৭৫৭ সালে প্রথম উদ্যোগ নেন রে্জমিন ফেনকোলিন। তিনি ভবনের উপর এক ধরনের লাইটিং রড বা রটের ফ্রট স্থাপন করে বজ্রপাত ও বিদ্যুৎ কে টেনে নিয়ে এই রড মাটির সাথে মিশিয়ে দেন। তবে যুক্তরাষ্ট্রের কার্যকর এই ধারণা আসে আরও পরে নীতিমালাও আসে রয়েল মেটিনি সোসাইটির সম্মেলনে ১৮৭৮ সালে। এদেশে ম্যাগনেটিক পিলার বজ্রপাত নিয়ন্ত্রণ করে এই ধারণাটি সম্পূর্ণ ভুল। বাংলাদেশের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তর ও বাধ্য হয়েছেন ম্যাগনেটিক পিলারের সত্যতা যাচাই করতে। পরীক্ষা করে দেখেছেন এর বাস্তবে কোন বজ্রপাত প্রতিরোধের ক্ষমতা নেই। মে থেকে জুন পর্যন্ত প্রতিদিন বিকাল বেলা সাধারণত বজ্রপাত হতো কিন্তু এখন বছরের ফেব্রুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত দিনের যেকোনো বেলায় বজ্রপাত হই। মূলত তাপমাত্রা বৃদ্ধির কারণে, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বজ্রপাত বৃদ্ধি পাচ্ছে। ম্যাগনেটিক পিলারকে প্রতারণার পণ্য তৈরি করে প্রতারকরা সাধারণ মানুষের নিকট থেকে এর কোটি টাকা মূল্য আছে বলে বিভিন্ন সময় কোটি কোটি টাকা প্রতারণা করে হাতিয়ে নিচ্ছে। এমন কি এক কৃষক ম্যাগনেটিক পিলার ভেবে মস্ত বড় রকেট লঞ্চার কে ঘরে রেখে দিয়েছিল কোটি টাকার মূল্যবান সম্পদ বলে।আবহাওয়াবিদরা জানান, শীতের পর বঙ্গোপসাগর থেকে উষ্ণ বাতাস আসতে শুরু করে, অন্যদিকে হিমালয় থেকে আসে ঠাণ্ডা বাতাস। দক্ষিণের গরম আর উত্তরের ঠাণ্ডা বাতাসে অস্থিতিশীল বাতাস তৈরি হয় আর এর থেকে তৈরি হয় বজ্র মেঘের। এরকম একটি মেঘের সঙ্গে আরেকটি মেঘের ঘর্ষণে বজ্রের তৈরি হয়।
ব্রজপাত বৃদ্ধির মূল কারন বৃক্ষ নিধন আর এই বৃক্ষ রোপণ করতে হবে প্রচুর পরিমাণে পাশাপাশি ব্রজপাত থেকে বাঁচতে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা অনুসরণ করতে হবে। বজ্রঝড় সাধারণত ত্রিশ থেকে পঁয়ত্রিশ মিনিট স্থায়ী হয়। এ সময়টুকু ঘরে অবস্থান করা। অতি জরুরি প্রয়োজনে ঘরের বাইরে যেতে হলে রাবারের জুতা পরা, এটি বজ্রঝড় বা বজ্রপাত থেকে সুরক্ষা দেয়। বজ্রপাতের সময় ধানক্ষেত বা খোলামাঠে থাকলে পায়ের আঙুলের ওপর ভর দিয়ে এবং কানে আঙুল দিয়ে নিচু হয়ে বসে পড়তে হবে।বজ্রপাতের আশঙ্কা দেখা দিলে যত দ্রুত সম্ভব দালান বা কংক্রিটের ছাউনির নিচে আশ্রয় নিতে হবে। ভবনের ছাদে বা উঁচু ভূমিতে যাওয়া উচিত হবে না।বজ্রপাতের সময় ঘরের বাইরের যে কোনো ধরনের খেলাধুলা থেকে শিশুকে বিরত রাখতে হবে, ঘরের ভেতরে অবস্থান করতে হবে।
খালি জায়গায় যদি উঁচু গাছপালা, বৈদ্যুতিক খুঁটি, ধাতব পদার্থ বা মোবাইল টাওয়ার থাকে, তার কাছাকাছি থাকা যাবে না। বজ্রপাতের সময় গাছের নিচে থাকা বিপজ্জনক।বজ্রপাতের সময় ছাউনিবিহীন নৌকায় মাছ না ধরতে যাওয়া। সমুদ্রে বা নদীতে থাকলে মাছ ধরা বন্ধ রেখে নৌকার ছাউনির নিচে আশ্রয় নেয়া।যদি কেউ গাড়ির ভেতর অবস্থান করেন, তাহলে গাড়ির ধাতব অংশের সাথে শরীরের সংযোগ না রাখা।