মোঃখলিলুর রহমান খলিলঃ
দেশের আকাশে মেঘ ছাড়াই বা হঠাৎ মেঘের ঘনঘটায় অস্বাভাবিক বজ্রপাত আগের যে কোনো সময়ের তুলনায় অনেক বেশি এবছর। বর্ষা মৌসুমে বজ্রপাত আরও বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে। তাই যথাযথ প্রস্তুতি না নেয়া হলে প্রাণহানি ঠেকানো সম্ভব নয় বলে জানিয়েছেন পরিবেশ ও আবহাওয়া বিশেষজ্ঞরা।
ডিজাস্টার ফোরাম বলছে, চলতি বছরে এ পর্যন্ত বজ্রপাতে মৃত্যু ৩০।
বিনা মেঘে বজ্রপাতের কথা শুধু প্রবাদেই নয়, বরং দেশের বর্তমান আবহাওয়াতেও খাপ খেয়ে গেছে। সাধারণত আকাশে মেঘ জমলে বজ্রপাতসহ বৃষ্টির দেখা মিলে। তবে এবছর জলাবায়ু পরিবর্তনের কারণে মেঘ ছাড়াই বা হঠাৎ মেঘের ঘনঘটায় অস্বাভাবিক বজ্রপাতের সংখ্যা অনেক বেড়েছে।
প্রচন্ড তাপদাহের মধ্যে এক পশলা শান্তির বৃষ্টিতে গত বৃহস্পতিবার (২ মে) দেশের মানুষকে স্বস্তি দিলেও, বজ্রপাতে সারা দেশে ১১ জনের মৃত্যুর সংবাদে নড়েচড়ে বসেছে সবাই। ডিজাস্টার ফোরাম বলছে, চলতি বছরে এ পর্যন্ত বজ্রপাতে মৃত্যুর সংখ্যা ৩০।
বজ্রপাতের জন্য যে মেঘের সৃষ্টি হয়, তা অনেকাংশে সাধারণ মানুষকে আগাম সতর্কতা দিয়ে থাকে নিরাপদ স্থানে আশ্রয় নেয়ার জন্য। তবে বর্ষার আগেই এবছর অসময়ে এবং অস্বাভাবিক বজ্রপাতের কারণে এই প্রাণহানির সংখ্যা বাড়তে পারে বলে জানিয়েছেন পরিবেশ বিশেষজ্ঞরা। তাদের মতে, দেশের অতি তাপদাহ এবং বর্ষাকালের দৈর্ঘ্য বেড়ে যাওয়ায় এবছর বজ্রপাতের সংখ্যাও বাড়তে পারে। তাই প্রয়োজন আগাম সতর্কতা এবং প্রস্তুতি।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব এনভাইরনমেন্ট সাইন্সের অধ্যাপক ড. মো. রিদওয়ানুর রহমান বলেন, যেহেতু এবছর অস্বাভাবিক বজ্রপাত অসময়েই বেশি দেখা যাচ্ছে, তাই এ বিষয়ে প্রান্তিক মানুষজনের সাধারণত কিছু করার থাকে না। আকাশে মেঘ থাকলে এই মানুষেরা অবস্থা বুঝে নিরাপদ আশ্রয়ে যেতে পারে। কিন্তু এই ধরনের অস্বাভাবিক বজ্রপাতে প্রাণহানির শঙ্কা সবসময় থেকেই যায়।
তিনি আরও বলেন, বজ্রপাতের সংখ্যা এখনও গত বছরের তুলনায় বেশি নয়। তবে অসময়েই এই দুর্যোগ দেখা দেয়ায়, বর্ষায় বজ্রপাতের সংখ্যা আরও বাড়বে। বিশেষ করে এবার উত্তরাঞ্চলের তুলনায় দক্ষিণাঞ্চলে প্রাণহানির সংখ্যা বেশি মনে হচ্ছে।
জাতিসংঘের প্রতিবেদন অনুসারে, বাংলাদেশে প্রতিবছর গড়ে ৩০০ জন বজ্রপাতে মারা যায়। যেখানে যুক্তরাষ্ট্রের মতো দেশে মারা যায় বছরে গড়ে ২০ জনেরও কম। বাংলাদেশে গাছপালা কেটে ফেলা, বিশেষ করে খোলা মাঠে উঁচু গাছ ধ্বংস করে ফেলা, প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা না নেয়া এবং অসচেতনতার কারণে বজ্রপাতে মৃত্যু বাড়ছে।
বাংলাদেশের মোট আয়তনের তুলনায় বনভূমি থাকা উচিত ২৫% কিন্তু বর্তমানে আছে মাত্র ৯%।রাস্তার পাশের গাছ কর্তন করে ব্লক দিয়ে রাস্তার পাড় করার ফলে গাছেরসংখ্যা কমছে এতে করেও বজ্রপাতের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে পথযাত্রীরাও বজ্রপাতে নিহত হচ্ছে।এই দুর্যোগ থেকে রক্ষা পেতে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার কথা বলেন অধ্যাপক রিদওয়ানুর। তিনি সারাদেশে নির্বিচারে গাছ কাটার ফলে পরিবেশের এই বিরূপ প্রভাবের কথা উল্লেখ করে বলেন, উত্তরাঞ্চলে তাল গাছসহ উঁচু গাছের সংখ্যা বেশি, তাই সেখানে বজ্রপাত দক্ষিণাঞ্চলের তুলনায় কম হয়। সারাদেশেই ক্যাম্পেইন করে উঁচু গাছ লাগানোর মাধ্যমে দীর্ঘমেয়াদি পদক্ষেপ নেয়া যেতে পারে। তবে খেয়াল রাখতে হবে, উঁচু গাছ দেখে সেটাকে নিরাপদ আশ্রয় ভাবা যাবে না। বজ্রপাতের সময় এগুলোর নিচে আশ্রয় না নিয়ে, নিরাপদ আশ্রয়নের ব্যবস্থা করার পরামর্শ দেন তিনি।
বজ্রপাত থেকে বাঁচার কৌশল উল্লেখ করে রোববার (৫ মে) এক ব্রিফিংয়ে আবহাওয়াবিদ মনোয়ার হোসেন বলেন,
পৃথিবীব্যাপীই এই কৌশল অনুসরণ করা হয়। সেটা হলো বিদ্যুৎ চমকাতে দেখার ৩০ সেকেন্ডের মধ্যে যদি বজ্রপাতের শব্দ শুনতে পান, তাহলে বুঝবেন সেটা আপনার দিকে আসছে বা সেটার দ্বারা আপনি ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারেন। আর যদি দেখেন বিদ্যুৎ চমকানোর ৩০ সেকেন্ড পর শব্দটা পেয়েছেন তাহলে বুঝবেন সেটা আপনার থেকে দূরে সরে যাচ্ছে। সে সময় যদি নিরাপদ আশ্রয়ে না থাকেন তাহলে এক আঙ্গুলের ওপর ভর করে বসে পড়তে হবে। এবং সেটা দ্বারা অনেক ক্ষয়ক্ষতি কমতে পারে। বেশি বেশি প্রচার করে মানুষকে এ ব্যাপারে জানাতে হবে।
পাশাপাশি নগরজীবনকে সুরক্ষিত রাখতে সনাতন পদ্ধতিতে লাইটেনিং অ্যারেস্টার লাগানোর পরামর্শও দিয়ে থাকেন বিশেষজ্ঞরা।