চকলেট ডে: চকলেট দিয়ে মিষ্টিমুখ করার রীতিনীতি।
চকলেট পছন্দ করে না এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। গবেষণাতেও দেখা গেছে, চকলেটের স্বাদ মনের কষ্ট ভোলাতে সাহায্য করে। সেই সঙ্গে আনন্দের অনুভূতিও বাড়ায়। এজন্য ভালোবাসা দিবসকে কেন্দ্র করে সবার মধ্যে দূরত্ব কমাতেই একটা বিশেষ দিবসের সৃষ্টি। দিবসটির নাম চকলেট ডে। হিসেব অনুযায়ী ভ্যালেন্টাইনস উইকের তৃতীয় দিন হলো চকলেট ডে। প্রথমে রোজ ডে তারপর প্রোপোজ ডে আর আজ চকলেট যে। এসব কারণে এটি জনপ্রিয়তা পেয়েছে সব বয়সী মানুষের কাছে। ভালো কাজ শুরু করার আগে একটু মিষ্টিমুখ না করলে কী হয়! চকলেট দিয়ে মিষ্টিমুখ করার রীতি অনেক পুরানো। ইতিহাস বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় যে, যুগ যুগ ধরে ভালোবাসার চিহ্ন হিসেবে চকলেটের আদান-প্রদান প্রচলিত। চকলেট ডে তে প্রিয় মানুষটিকে চকলেট দিয়ে মনের কথা না জানালেই নয়। ভালোবাসার মানুষের মধ্যে চকোলেট ভাগ করে নেওয়ার এই রীতি কিন্তু শুরু হয়েছিল অভিনব উপায়ে। অতীতে চকলেট জনপ্রিয় পানীয় হিসেবেই বিখ্যাত ছিল।
চকলেট (chocolate) শব্দটি এসেছে স্প্যানিশ ভাষা থেকে। ধারণা করা হয়, নাহুয়াতি ভাষা, অর্থাৎ অ্যাজটেকদের ভাষার শব্দ chocolatal থেকে এসেছে chocolate শব্দটি। এই chocolatal এসেছে xocolatl থেকে। xococ এর অর্থ হলো তেতো বা টক এবং atl এর অর্থ হলো তরল বা পানীয়। জানা গেছে, প্রায় ৪ হাজার বছর আগে মেসো আমেরিকায় চকলেট খাওয়ার রীতি ছিল উপজাতিদের মধ্যে। তবে বর্তমানের মতো শক্ত চকলট নয়। তখন চকলেট খাওয়া হতো তরল অবস্থায়। কাপ বা কাপের মতো দেখতে পাত্রে করে তা পরিবেশন করা হতো।
ঐতিহাসিকরা বলেন, অলমেক ও মায়া সভ্যতার মধ্যে তরল চকলেট খাওয়ার রীতি প্রচলিত ছিল। তবে তারা যে ঘন ঘন এই পানীয় খেতেন তা নয়। বিভিন্ন অনুষ্ঠান উপলক্ষে এই পানীয় পরিবেশনের রীতি ছিল। কোকা গাছ থেকে প্রাপ্ত এই পানীয় তখন থেকেই জনপ্রিয়। তবে এই পানীয় প্রেম প্রকাশের চিহ্ন হলো কবে থেকে? তা খুব নিশ্চিত করে বলতে পারেননি কেউই। আধুনিক সভ্যতার ইতিহাস বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় যে, জে এস ফ্রাই অ্যান্ড সন্স সংস্থা প্রথম ১৮৪৭ সালে শক্ত চকোলেট তৈরি শুরু করল। এরপর ১৮৪৯ সালে রিচার্ড ক্যাডবেরি শুরু করেন চকলেট তৈরি। ভিক্টোরিয়ার যুগে চকলেট প্রেমিক-প্রেমিকার মধ্যে উপহার হিসেবে বেশ জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। ইউরোপ ও আমেরিকায় ভালোবাসা জানানোর অন্যতম উপহার ছিল এই মিষ্টি। ইতিহাস অনুসারে, ১৯ শতকে একটি ব্রিটিশ পরিবার কোকোয়া মাখন ব্যবহারের পদ্ধতি খুঁজছিলেন। তখন রিচার্ড ক্যাডবেরির চকলেটের মাধ্যমেই সবাই শক্ত আকারের চকলেটের স্বাদ নেওয়ার সুযোগ পান। নিজের তৈরি ছোট্ট সুন্দর বাক্সে চকলেট ভরে বিক্রি শুরু করেন তিনি। সযত্নে তৈরি সে বাক্সে একই সঙ্গে থাকতো ভালোবাসার দূত কিউপিড ও গোলাপ কুঁড়ি। তারপর থেকেই বিপুল জনপ্রিয় হয়ে ওঠে চকলেট বার।
১৯৫০ সাল থেকে জাপানে ভ্যালেন্টাইনস ডে’তে চকলেট উপহার দেওয়ার প্রথা শুরু হয় মোরোজফ নামের এক চকলেট প্রস্তুতকারী কোম্পানির হাত ধরে। তবে ওই দেশে কেবল প্রেমিকারাই চকলেট উপহার দেন পুরুষদের। এভাবেই শুরু হল চকোলেট ডের পথচলা। যা উনিশ শতক পার করে একুশ শতকেও সমান জনপ্রিয়।
এদিকে ভালোবাসা দিবস উদযাপনের আগে ৯ ফেব্রুয়ারি উদযাপন করা হয় চকলেট ডে। বছরে একাধিক চকলেট দিবসের প্রতিটিতেই চকলেটপ্রেমীরা নিজে চকলেট খান, আবার অন্যকেও চকলেট উপহার দেন। শুধু ৯ ফ্রেব্রুয়ারি নয়, ছোট বড় সবার কাছেই চকলেটের জনপ্রিয়তা এত বেশি যে ১৩ সেপ্টেম্বরও আন্তর্জাতিক চকলেট দিবস উদযাপন করা হয়। এছাড়া ২৭ জানুয়ারিও অনেকে ঘটা করে খান চকলেট কেক। কেন না সেদিন চকলেট কেকের দিন। চকলেট খেতে যেমন সুস্বাদু, দেখতে যেমন লোভনীয় তেমনি শরীরে নানা উপকারে কাজে আসে। প্রাকৃতিক চকলেট অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের গুণে সমৃদ্ধ। এটি মন মেজাজ ভালো রাখতে দারুণ কাজে দেয়। এছাড়া চকলেটের মধ্যে ফ্ল্যাভনয়েডস রয়েছে। এই বিশেষ উপাদান হার্টের স্বাস্থ্য ভালো রাখতেও কাজ করে। তাই আজকের দিনে সুযোগ বুঝে প্রিয় মানুষটিকে চকলেট দিতে পারেন।
লেখকঃ মোশারফ হোসাইন উপজেলা নির্বাহী অফিসার সরাইল, ব্রাহ্মণবাড়িয়া।