বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামের ১২৫তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত।
রিপোর্টার- মো. আলাউদ্দিন আকাশ।
জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম এঁর ১২৫তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে ব্রাক্ষণবাড়িয়ার নবীনগরের ভিটিবিষাড়া গ্রামে অদ্য ১১জুন ২০২৪ইং বিকাল-০৫ ঘটিকায় ভিটিবিষাড়া সরকারী জুনিয়র হাইস্কুল প্রাঙ্গণে, আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। গনপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের সাবেক সচিব ও বাংলাদেশ সরকারি কর্মকমিশনের সদস্য, মো. খলিলুর রহমানের সভাপতিত্বে উক্ত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, নজরুল ইনস্টিটিউটির ট্রাস্টি ও নজরুল পৌত্রী, জনাবা খিলখিল কাজী ও বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন- নবীনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জনাব তানভীর ফরহাদ শামীম ও প্রধান আলোচক হিসেবে উপস্থিত থেকে আলোচনা, সাভার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের পরিবার পরিকল্পনা কমকর্তা ও অত্র শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সভাপতি ডাঃ সায়েমুল হুদা।।
দ্রোহ ও প্রেমের কবি কাজী নজরুল ইসলামের ১২৫তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভার, প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে নজরুল ইসলামের বিদ্রোহী জিবন নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনায় জনাবা খিলখিল কাজী বলেন- আমাদের প্রিয় কবি শৈশব ও কৈশোরে দ্ররিদ্য পরিবারে বেড়ে ওঠার কারণে প্রতিভা জীবিকার তাগিদে সম্পৃক্ত হয়েছেন নানা পেশায়। লেটো দলের বাদক, রেল গার্ডের খানসামা, রুটির দোকানের শ্রমিক—নানারকম পেশা বেছে নিয়েছিলেন প্রথম বিশ্বযুদ্ধে সৈনিক হিসেবে যোগ দিয়েছিলেন। ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনে পথে নেমেছেন। শাসকের কোপানলে পড়েছেন, কারারুদ্ধ হয়েছেন। করেছেন সাংবাদিকতাও। এই সময়গুলোতেই কালি ও কলমে স্ফুলিঙ্গ ছড়িয়েছেন তিনি। বাংলা সাহিত্যে বিদ্রোহী কবি হিসেবে পরিচিত হলেও তিনি ছিলেন একাধারে কবি, সংগীতজ্ঞ, ঔপন্যাসিক, গল্পকার, নাট্যকার, প্রাবন্ধিক, সাংবাদিক, চলচ্চিত্রকার, গায়ক ও অভিনেতা। তার কবিতা, গান ও সাহিত্য কর্ম বাংলা সাহিত্যে নবজাগরণ সৃষ্টি করেছিল। তিনি ছিলেন অসাম্প্রদায়িক চেতনার পথিকৃৎ লেখক। তার কবিতা ও গান মানুষকে যুগে যুগে শোষণ ও বঞ্চনা থেকে মুক্তির পথ দেখিয়ে চলছে। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে তার গান ও কবিতা ছিল প্রেরণার উৎস।
তিনি ছিলেন নিপীড়িত মানবতার কবি। সারা জীবন তিনি সাম্যের গান গেয়েছেন, শোষকের বিরুদ্ধে কলম ধরেছেন। সমাজের শোষিত-বঞ্চিত মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার পক্ষে লিখে গিয়েছেন। তিনি নির্ভীক চিত্তে ধর্মান্ধতা ও কূপমণ্ডূকতার বিরুদ্ধে তাঁর ক্ষুরধার রচনা অব্যাহত রেখেছেন। থেকেছেন আপসহীন। লোভ–খ্যাতির মোহের কাছে মাথা নত করেননি। কারা নির্যাতনেও বিচ্যুত হননি লালিত আদর্শ থেকে। অন্যদিকে তিনি মানুষের হৃদয়ের কোমল অনুভূতির প্রতিও সমান আবেগে সাড়া দিয়েছেন। অজস্র গানে তিনি সমৃদ্ধ করেছেন বাংলার সংগীত ভুবন। প্রবর্তন করেছিলেন বাংলা গজল। বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে কাজী নজরুল ইসলামের অবদান স্বাতন্ত্র্য মহিমায় সমুজ্জ্বল। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব ছিলেন কবির প্রতি একান্ত অনুরক্ত। বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর পরই বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যার্বনের মাত্র ৪ মাসের মধ্যে ১৯৭২ সালের ২৪ মে বিদ্রোহী কবিকে সপরিবারে সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশে এনে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় তার বসবাসের ব্যবস্থা করেন এবং বঙ্গবন্ধুর ঐকান্তিক আগ্রহে কবিকে জাতীয় কবির সম্মানে অধিষ্ঠিত করা হয়। নজরুল যে অসাম্প্রদায়িক, বৈষম্যহীন, শোষণমুক্ত ও শান্তিপূর্ণ সমাজ প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন দেখতেন, তারই প্রতিফলন আমরা পাই জাতির পিতার সংগ্রাম ও কর্মে। তাই বঙ্গবন্ধু বক্তৃতায় বলেছেন – কবি নজরুল বাংলার বিদ্রোহী আত্মার বাঙালীর স্বাধীন সত্তার রূপকার।