শিরোনাম :
কোম্পানীগঞ্জে ছাত্রদলের সভাপতি রাকিব ও সম্পাদক নাছিরকে শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়ে ছাত্রদলের আনন্দ মিছিল সাধুপাড়া রেজভীয়া দরবার শরীফে ইফতার ও মিলাদ মাহফিল অনুষ্ঠিত ইসলামবাগ মাদ্রাসায় হাফিজি বাচ্চাদের নিয়ে ইফতার মাহফিল অনুষ্ঠিত। নোয়াখালীতে ছাত্রদল নেতাকে হত্যার পরিকল্পনা ফাঁস, থানায় জিডি পাকুন্দিয়ায় জিয়া উদ্দিন বাদশার মা স্মৃতি পাঠাগারের উদ্যোগে এতিমদের আর্থিক সহযোগিতা প্রদান ও ইফতার মাহফিল অনুষ্ঠিত নবীনগর শাহবাজপুরে জামায়াতের আলোচনা সভা ও ইফতার মাহফিল অনুষ্ঠিত। আলমনগর দারুল উলুম ইসলামিয়া হাফিজিয়া মাদ্রাসার উদ্যোগে দোয়া ও ইফতার মাহফিল অনুষ্ঠিত ২০নং কাইতলা দক্ষিণ ইউনিয়ন বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের উদ্যোগে ইফতার পার্টি ও আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত নেই বেতন, নেই বোনাস শিক্ষকদের ভোগান্তির শেষ কোথায় ,দেখার কেউ নাই। ফিলিন্তিনে মুসলিম হত্যার প্রতিবাদে বসুরহাট দারুননাজাত মাদরাসার মানববন্ধন
বৃহস্পতিবার, ২৭ মার্চ ২০২৫, ০৯:৪৪ পূর্বাহ্ন

মিষ্টির প্যাকেট ও দইয়ের পাতিলের ওজনের কারসাজির কারণে জনপ্রিয়তা হারাচ্ছে নবীনগরের মিষ্টি ও দই

প্রতিনিধির নাম / ৫৪০ বার
আপডেট : বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল, ২০২৪

 

মিষ্টির প্যাকেটও দইয়ের পাতিলের ওজনের কারসাজির কারণে জনপ্রিয়তা হারাচ্ছে নবীনগরের মিষ্টি ও দই

মোঃ খলিলুর রহমান খলিলঃ ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগরের মিষ্টির জনপ্রিয়তা দেশের গণ্ডি পেরিয়ে বিদেশেও সুখ্যাতি অর্জন করেছে। নবীনগর লঞ্চ ঘাটের আওলাদ মিষ্টি ছিল নবীনগরের সদরের জনপ্রিয় মিষ্টি। প্রবাসীরা দেশ থেকে বিদেশে যাওয়ার পথে আওলাদ মিষ্টি বিতানের মিষ্টি নিয়ে যেতেন। প্রফুল্ল ঘোষের মিষ্টি ও দইয়ের সুখ্যাতি রয়েছে নবীনগর উপজেলায়।পদোন্নতি, বিয়ে, ফলাফল সহ যেকোন সুখবরে মিষ্টি বিতরন করা নবীনগর বাসীর একটি ঐতিহ্যগত রীতি।মিষ্টির ব্যবসায়ে নবীনগর উপজেলায় সুপরিচিত নাম ছিল আওলাদ মিষ্টি, লেবার মিষ্টি ও প্রফুল্ল ঘোষের মিষ্টি। সাম্প্রতিক সময়ে রাধাকৃষ্ণের মিষ্টি ও গেরিধারীর মিষ্টির জনপ্রিয়তা ও গুনগত মানের নিকট আওলাদ, লেবার ও প্রফুল্ল ঘোষের মিষ্টি জনপ্রিয়তায় পিছিয়ে পড়েছে।
জনপ্রিয় এই পাচটি মিষ্টি বিতান সহ নবীনগর উপজেলায় রয়েছে শতাধিক মিষ্টি বিতান।সবগুলো মিষ্টি বিতান অতিরিক্ত মুনাফা অর্জনের নেশায় গ্রাহকদেরকে প্যাকেট ও পাতিলে জালিয়াতি করে আসছে বহু দিন ধরে। এই কারণে ভালো মানের মিষ্টি হওয়া স্বত্বেও মিষ্টি দোকানিদের প্রতি আস্তা হারাচ্ছে গ্রাহকরা।মাঝে মাঝে মোবাইল কোর্ট পরিচালিত হলে সব ঠিক ঠাক চললেও যে লাউ সেই কদু।
একসময় মিষ্টির দোকানে সন্দেশ, বাতাসা আমিত্তি পাওয়া যেত। যার স্বাদে বিমোহিত হয়েছে সমগ্র দেশ।
কথাসাহিত্যিক হুমায়ুন আহমেদের “ঘেটু পুত্র কমলা” বাংলা চলচিত্রে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগরের বাতাসার প্রশংসা করতে দেখা গেছে। এক সময় জনশ্রুতি ও পুঁথিতে নবীনগরের বাতাসা ও সন্দেশের জনপ্রিয়তা ও শ্রেষ্ঠত্বের সুনাম থাকলেও এখন হাট-বাজারে তেমন একটা দেখা মেলে না নামকরা এ মিষ্টি জাতীয় মুখরোচক বাতাসা ও সন্দেশের।

বাংলাদেশে আধুনিক মিষ্টির ইতিহাস ২শ থেকে ৩শ বছরের হলেও মিষ্টি জাতীয় খাদ্য সামগ্রীর ইতিহাস ২ হাজার বছরেরও পুরনো বলে জানা যায়। যা পৌরাণিক কল্পকাহিনী ও ধর্ম গ্রন্থ গুলোতে লিপিবদ্ধ আছে। বৃটিশ ভারতের ভাইসরয় লর্ড ক্যানিং এর স্ত্রী লেডিক্যানির নামেও এদেশে মিষ্টির নামকরণ করা হয়েছে। যা আদতে লালমোহন ভোগ জাতীয় মিষ্টি। হিন্দুদের দেবতা শ্রীকৃষ্ণের প্রিয় খাবার ছিল মিষ্টি জাতীয় খাদ্য বিশেষ করে দই, ক্ষীর, মাখন ও ঘি।

বর্তমানে নবীনগরের মিষ্টির সুনাম ছড়িয়ে পড়েছে দেশব্যাপী। উপজেলার নবীনগর টু কোম্পানিগঞ্জ সড়কের ইব্রাহিমপুর বাঁশবাজার, ভোলাচং, কোনাঘাট, নবীনগর সদর বাজার, নবীনগর টু আড়াইহাজার ফেরিঘাট সড়কের শ্যামগ্রাম ইউপির শ্যামগ্রাম, ছলিমগঞ্জ টু বাঞ্ছারামপুর সড়কের বড়িকান্দি ইউপির ছলিমগঞ্জ, লাউর ফতেহপুর ইউপির বাশারুক, ফতেহপুর, শিবপুর ইউপির শিবপুর বাজারসহ উপজেলার বিভিন্ন হাট-বাজারের মিষ্টি এনে দিয়েছে সুখ্যাতি। এ যেন মিষ্টির নগরী। তবে মিষ্টি তৈরিতে সবচেয়ে বেশি সুনাম কেড়েছেন সলিমগঞ্জ বাজারের রাধাকৃষ্ণের দোকান ও শ্যামগ্রাম বাজারের লেবার দোকানের মিষ্টি।

স্থানিয় উদোক্তাদের খামার ও চাষীদের পালিত গাভীর দুধ বাড়ি ও বাজার থেকে সংগ্রহ করে এ সব দোকানে তৈরিকৃত প্রতি কেজি রসগোল্লা নরমাল ২৪০ টাকা, সাদা চমচম ২৮০, লাল চমচম ২৮০, মাওয়া স্পেশাল চমচম ৩২০, কালো জাম ২৪০, সাদা নরমাল মিষ্টি ২৫০, জাফরান ভোগ ৫০০, বেবি আঙ্গুরি ৩৫০, কাঁচা ছানা বরফি ৫০০, ছানা আমৃত্তি স্পেশাল ৫০০, ছানামুখি ৫০০, ছানা মিষ্টি ৩২০, রাজভোগ স্পেশাল ৪৫০, কাঁচাগোল্লা ৫৫০, স্পেশাল রসমালাই ৩২০ক্ষীরপেরা সন্দেশ ৬০০, সাদা সন্দেশ ২৫০, গজা ২২০, ক্ষীর দধি ১ গ্লাস ৩০, লালমোহন ২৮০, লালমোহন স্পেশাল ঘি ভাঁড় ৪৫০, নিমকি ২২০, জিলাপি (চিনি) ১৪০, মাষের আমৃত্তি ১৮০, সরমলাই ৫০০ টাকা দরে সুস্বাদু মজার বাহারি নামের মিষ্টি বিক্রি করা হয়ে থাকে।

এছাড়াও দই-মাঠা, লাচ্ছি, সন্দেশ, লুচি, গুড়ের জিলাপি, মাষের ডালের জিলাপি, মন্ডা মিষ্টি, বালিশ মিষ্টি, কাঁচাগোল্লা, পানতোয়া, সাবিত্রী, রসমঞ্জুরি, রসকদম, খন্ডাল, মতিচুর, লাড্ডু, মাখন, ঘি, লেডিকেনি, স্পঞ্জ, প্রাণহরা, লালমোহন, কাঁচা মরিচের মিষ্টি, প্যারাসহ নানা মিষ্টি জাতীয় খাবারের সমাহার থাকে উপজেলার মিষ্টি দোকান গুলোতে।

রাধাকৃষ্ণ মিষ্টি দোকানের মালিক জানান, দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে মানুষ মিষ্টি খেতে আসে। কেউ কেউ ১ থেকে ২০ কেজিও সঙ্গে করে নিয়ে যায় পরিবার ও আত্মীয়-স্বজনদের জন্য।

লেবার মিষ্টির দোকানের মালিক জানান, দৈনিক গড়ে ভালোই মিষ্টি বিক্রি করি। তবে বিভিন্ন অনুষ্ঠানের সময় বেশি মিষ্টি বিক্রি হয়।

নবীনগরের মিষ্টি খেতে চাইলে চলে আসতে পারেন, সেজন্য বর্তমান প্রযুক্তির জামানায় গুগুল ম্যাপের সাহায্য নিয়ে দেশের যে কোন স্থান থেকে আসতে পারেন খুব সহজে।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর, বাঞ্ছারামপুর, মুরাদনগর থানার কোম্পানিগঞ্জ বাস স্টেশন থেকে সিএনজি যোগে আসতে পারেন নবীনগরের রসালো মিষ্টির স্বাদ নিতে। স্থান ভেদে আকার ও মিষ্টির ভিন্নতায় দাম হবে প্রতি কেজিতে ২২০ টাকা থেকে ১,০০০ টাকা কেজি মাত্র। সর্বোচ্চ ১২ টি কিংবা ১ টি মিষ্টিই হতে পারে ১ কেজি ওজনের। চাইলে অর্ডার করে নিজের চাহিদা মতো সাইজ করে নিতে পারেন।
তাছাড়া শুক্রবারে জুম্মার দিন তোবারকের জিলাপিতেও প্রতারণা করে পচা বাশী ও নষ্ট জিলাপি দেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গিয়েছে।
নবীনগর মডেল প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক হুমায়ূন কবির বলেন, ওজন ও গুনগত মানের বিষয়ে সততার সাথে ব্যবসা করলে মিষ্টি ব্যবসায়ীরা তার ঐতিহ্য ধরে রাখতে পারবে।

Facebook Comments Box


এ জাতীয় আরো সংবাদ