জীবের জীবন: কেউ মরতে চায়না
জীবন মহাপরাক্রমশালীর দান। জীবনের পরিসর ও পরিণতি আছে। জীবন দিয়ে যেমন সময় বেঁধে দেয়া আছে, তা তেমনি জীবনের যবনিকাপাতের জন্য রয়েছে মৃত্যু। কিন্তু মৃত্যু তো মাত্র শেষ পরিণতির নাম, মৃত্যুর জন্য জীবন নয়। মানবজীবন একটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে আবর্তিত। অর্থাৎ সময়ের সমষ্টির নাম জীবন। এ সময়ের সমাপ্তির একটি মাধ্যম হলো মৃত্যু। কিন্তু মৃত্যুর ক্রান্তির জন্য জীবন নয়। জীবনের একটি আলাদা পরিসীমা ও মূল্যায়ণ রয়েছে। জীবন একটি গতির নাম। এ গতির মৌলিক ধারা রয়েছে। যে ধারা মানুষ তথা প্রত্যেক জীবের মাঝে কাজ করে। জীবন হলো সজীব শক্তি। কিন্তু মৃত্যু তো মাত্র যবনিকা বা শেষ পরিণতি। জীবন হলো মূল্যবান ও অপার শক্তি যার ধারাবাহিকতার পরিসীমা রয়েছে। যেদিন এ পরিসীমা শেষ হবে তখন মৃত্যু নামের শৃঙ্খলার মাধ্যমে এ জগৎ ত্যাগ করাই হবে জীবনের সঙ্গত গতানুগতিক কাজ। জীবন আছে বলেই মৃত্যু অনিবার্য। অর্থাৎ জীবনের জন্যই মৃত্যু। প্রকৃতিতে সকল প্রাণী অভিযোজিত হয়ে বেঁচে থাকে। ছোটো প্রাণীকে খেয়ে বড় প্রাণী বাঁচে। যেমন-বনের মধ্যে যখন বাঘ হরিণকে বা সিংহ জিরাফকে খাওয়ার জন্য তাড়া করে তখন প্রাণে বাঁচার জন্য এসব প্রাণীর কী প্রাণান্তর চেষ্টাই না দেখা যায়। জলের মধ্যে বৃহৎ প্রাণী তিমি, হাঙ্গর অথবা কুমির জলের ছোটো ছোটো প্রাণী বা মাছকে খাওয়ার জন্য তাড়া করলে তাদের বাঁচার জন্য ঐ একই রকম পরিস্থিতি দেখা যায়। মনুষ্য সমাজের চারপাশেও এ রকমটা হয়। একটি তেলাপোকাকে মারার চেষ্টা করলে সে আহত হলেও বাঁচার সীমাহীন চেষ্টা করতে দেখা যায়। অনুরূপভাবে, পিঁপড়া, মশা-মাছির মধ্যেও প্রাণে বাঁচার চেষ্টা দেখা যায়। দুষ্ট ছেলেরা পাখি, ফড়িং অথবা প্রজাপতির ডানা ভেঙ্গে দিলে তাদের করুণ অবস্থা সহজেই চোখে পড়ে। তারা উড়ে জীবন বাঁচানোর ব্যর্থ চেষ্টা করতে থাকে। গরু, ছাগল অথবা হাঁস-মুরগি জবাই করার সময় দেখা যায় সর্বশক্তি দিয়ে বাঁচার কী নিদারুণ চেষ্টা এরা করে থাকে। জলের মধ্যে পিঁপড়া বা ক্ষুদ্র প্রাণী পড়লে নিরাপদ আশ্রয়ে গিয়ে জীবন রক্ষার প্রচণ্ড চেষ্টা করতে থাকে। সেখানে কোনো খড় বা ভাসমান কিছু পেলে তাতে আশ্রয় নিয়ে বাঁচার প্রাণান্তর চেষ্টা দেখা যায় এসব প্রাণীদের মধ্যে। সুতরাং প্রাণিজগতের সব প্রাণীর কাছে তাদের প্রাণই সবচেয়ে মূল্যবান অর্থাৎ প্রতিটি জীব শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত বেঁচে থাকতে চায়।