মোঃ আলমগীর হোসেন, জনতা নিউজ: উচ্চ আদালতের নির্দেশনা অমান্য করে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর উপজেলার বিভিন্ন সড়কে চলাচলকারী যানবাহন থেকে অবৈধভাবে নবীনগর পৌর এলাকায় ও শিবপুর ইউনিয়ন উচ্চ বিদ্যালয়ের সামনেসহ উপজেলার বিভিন্ন সড়কের মোড়ে যানবাহন থামিয়ে প্রতিদিন হাজার হাজার টাকা টোল আদায় করার অভিযোগ উঠেছে। অবৈধ টোল আদায়ের কারনে অতিরিক্ত ভাড়া গুনতে হচ্ছে সাধারণ যাত্রীদের। এই টাকা কর পকেটে যাচ্ছে? এমন প্রশ্ন সাধারণ যাত্রীদের।
জানাযায়, অবৈধ টোল আদায় বন্ধ করতে মহামান্য হাইকোর্ট গত ২৫ জুলাই রুল জারি করেন। কোন টার্মিনাল এলাকায় টেন্ডার ছাড়া টোল আদায় করা যায় না। পৌরসভার বিধানের ৯৮ ধারার ৭ নং অনুচ্ছেদ অনুসারে শুধু মাত্র পৌরসভা নির্মিত টার্মিনাল ছাড়া পার্কিং ফি নামে টোল আদায় সম্পুর্ন অবৈধ। এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে জেলা, উপজেলা ও পৌর এলাকার সকল প্রশাসনকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। অথচ উচ্চ আদালতের নির্দেশনা অমান্য করে নবীনগর পৌরসভা এলাকায় ও শিবপুর ইউনিয়ন উচ্চ বিদ্যালয়ের সামনেসহ উপজেলার সড়কগুলোতে চলাচলকারী সিএনজি, অটোরিক্সা, অটোবাইক. ভ্যান, নছিমন, ট্রাক, পিকাপ ভ্যান, প্রাইভেটকার, মাইক্রোবাস, মিনিবাস, গরু পরিবহনের ট্রাকসহ বিভিন্ন যানবাহন গতিরোধ করে বিভিন্ন হারে প্রতিদিন হাজার হাজার টাকা টোল আদায় করার অভিযোগ উঠেছে। চালকরা টোল দেওয়ার কারনে তারাও যাত্রীদের কাছ থেকে আদায় করে নিচ্ছে অতিরিক্ত ভাড়া। ফলে চরম বিপাকে পড়েছে সাধারণ যাত্রীরা। টোলের নামে আদায়কৃত এ সকল টাকা কার পকেটে যাচ্ছে? এমন প্রশ্ন সাধারণ যাত্রীদের।
নবীনগর পৌরসভাসহ উপজেলার ২১টি ইউনিয়নে প্রায় ১৫/২০ হাজার অটোবাইক, অটো রিক্সা, ও অটোভ্যান রয়েছে। গরীব অসহায় মানুষেরা সামান্য টাকা আয় করে অনেক কষ্টের মধ্যে পরিবার পরিজন নিয়ে জীবন যাপন করছে। অথচ এদের নিকট থেকে অবৈধভাবে আদায় করা টোলের নামে চাঁচা।
ওই সকল সড়কের চালকরা জানান, ওই সকল সড়ক দিয়ে চলাচল কারী ছোট-বড় সকল যানবাহন হতে টোল আদায় করা হচ্ছে। প্রকাশ্যে যানবাহন দাঁড় করিয়ে রশিদের মাধ্যমে টোল নেওয়ার নামে চাঁদা আদায় করা হচ্ছে। টাকা না দিলে প্রতিনিয়ত ড্রাইভার ও সাধারন যাত্রীদের সাথে দূর্ব্যবহার করছে। চাঁদা আদায়ের জন্য লাঠি নিয়ে বেশ কয়েক জন লোক সড়কের পাশে দাঁড়িয়ে থাকে। ওই সকল সড়কের টোল আদায়ের সাথে এলাকার প্রভাবশালী গোষ্ঠি ও স্থানীয় পর্যায়ের জনপ্রতিনিধিরা জড়িত থাকার গুঞ্জন রয়েছে।
শিবপুর সিএনজি ও অটোরিকসা স্ট্যান্ড থেকে টোল আদায়কারী জাহাঙ্গীর আলম ও কবির হোসেন বলেন, প্রতিদিন যে টাকা আদায় হয় তার একটি অংশ লাইনম্যানদের বেতন দেওয়া হয়, আর বাকি টাকা শ্রমিক ইউনিয়ন কমিটির নেতারা নিয়ে যায়। তারা আরও বলেন, গত কয়েক মাস আগেও শিবপুর স্কুলের ফান্ডে সিএনজি ও অটোরিকসা স্ট্যান্ড থেকে প্রধান শিক্ষকের কাছে রিসিটের মাধ্যমে টাকা দেওয়া হয়েছে।
শিবপুর ইউনিয়ন উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হোসাইন কবির প্রতিদিনের পোস্টকে বলেন, বিদ্যালয়ের পরিচালনা কমিটির মাধ্যমে যখন সিএনজি ও অটোরিকসা স্ট্যান্ড ইজারা দেওয়া হতো, তখন আদায়কৃত টাকার একটি অংশ স্কুলের ফান্ডে জমা হতো। কিন্তু গত কয়েক বছর যাবৎ সিএনজি ও অটোরিকসা স্ট্যান্ড ইজারা না হওয়ার কারনে স্কুলের ফান্ডে টাকা আর আসেনা।
এলাকাবাসী,সাধারণযাত্রী ও যানবাহন চালকদের দাবী, অবিলম্বে অবৈধ টোল আদায় বন্ধসহ চাঁদাবাজদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যাবস্থা নেওয়া হোক।
নবীনগর পৌরসভার মেয়র এড. শিব শংকর দাস বলেন প্রতিদিনের পোস্টকে বলেন, পৌরসভার লাইসেন্সধারী প্রায় ১ হাজার ছোট বড় যানবাহন রয়েছে, অথচ নবীনগর পৌর এলাকায় প্রতিদিন তিন হাজারের বেশি যানবাহন প্রবেশ করছে। তিনি আরও বলেন, পৌরসভা থেকে ইজারা দেওয়া স্ট্যান্ডে রিসিটের মাধ্যমে প্রতি গাড়ি থেকে ১০ টাকা করে আদায় করা হচ্ছে। অথচ মাঝিকাড়া এলাকায় একটি চক্র প্রতি গাড়ি থেকে অবৈধভাবে ৩০ টাকা করে চাঁদা আদায় করে যাচ্ছে দিনের পর দিন। ওই স্থানের চাঁদা বন্ধ করতে এমপি মহোদয়সহ উপজেলা প্রশাসনকে অবগত করেছি। কিন্তু কোন ফল পাচ্ছি না।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার একরামুল ছিদ্দিক বলেন, নবীনগর উপজেলার বিভিন্ন সড়কে অবৈধ টোল আদায়ের বিষয়টি নিয়ে আমরা কাজ করছি, খুব দ্রুত কার্যকরী পদক্ষেপসহ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।